ঘরে ঢোকার গেট, মানে সদর দরজাও বলতে পারো। সেটাও লোহার গ্রিল দিয়ে তৈরী। তবে হাত খানেক ভেতরের দিকে সবসময় একটা নীলচে রঙের পর্দা ঝোলে। সুতরাং বাইরে থেকে সেজদাদুর ঘরের ভেতরের কোনো জিনিস দেখতে পাওয়া যে কঠিন ব্যাপার, সেটা নিশ্চই বুঝতে পারছো। যাই হোক, দরজার সামনা সামনি এসে আমি একটু গলা খাঁকড়ে, বললাম "সেজো দাদু বাড়িতে আছো?" জানি বাড়িতে আছেন। তবুও কি ভাবে ডাকবো বুঝতে না পেরে, এটাই বললাম। দু'একবার ডাকার পর ভেতর থেকে আওয়াজ এলো "কেরে বুবুন নাকি? দাঁড়া আসছি"। আমরা হাসিমুখে নিজেদের দিকে একটু চোখাচুখি করে নিলাম। রাজা ফিসফিস করে বললো "আজ বুড়োর মন ভালো দেখছি। এতো তাড়াতাড়ি সাড়া মিললো"। মিনিট চারেক পর সেজদাদু বেরিয়ে এলো। সেজো দাদুর চেহারা ছিপছিপে। সাড়ে পাঁচ ফুট মতো লম্বা হবেন। চুল কোঁকড়ানো, বেশির ভাগ চুলই সাদা হয়ে গেছে। মুখের বাঁ দিকটার চামড়া বয়সের জন্য একটু কোচকানো হলেও ডানদিক টা কোনো অজ্ঞাত কারণে বেশ মসৃণ। নাকটা বেশ ধারালো আর নাকের ডান দিকে একটা ছোট্ট কাটা দাগ আছে। চোখের ভ্রু বেশ পুরু তবে সেখানে পাকা চুলের অতটা বাড়বাড়ন্ত নেই। চোখে একটা কালো রঙের মোটা ফ্রেম এর চশমা। আজ পরনে একটা ছাই রঙের পাতলা পান্জাবী আর সাদা ধুতি সাথে
আর পাথর কুচি ফেলা রাস্তাটা ধরে এগোতে লাগলাম একটু ভয়ে ভয়ে। মানে সেজোদাদু যখন কাজ করেন তখন কেউ ডিসটার্ব করলে উনি বেজায় চোটে যান। এই হালকা বৃষ্টিতে রাস্তার দুধারে লাগানো ফুলগাছ গুলো যেন আবার নতুন করে জেগে উঠেছে। কতরকম এর ফুল আর তাদের মন মাতানো গন্ধ। গাঁদা, গোলাপ, রঙিন জবা আরো কত কি। সত্যি কথা বলতে আরো অনেক ধরণের ফুলের গাছ আছে যেগুলোর আমি বা আমরা নামও জানিনা। জানার যে চেষ্টা করিনি তা না। তবে একটা অচেনা ফুল দেখে তার নাম খুঁজে বের করার আগেই সেজদাদু আবার নতুন ফুল গাছ আমদানি করে ফেলেন। তাই এখন চেষ্টাই ছেড়ে দিয়েছি। সেজদাদুর বাড়িটা পোড়া হলুদ রঙের, কিন্তু অনেক দিন রং না করার জন্য মাঝে মাঝে জমে থাকা শ্যাওলা বাড়িটার শ্রী কিছুটা হলেও নষ্ট করেছে। বাড়িটা দোতলা। একতলায় সামনের দিকে একটা বারান্দা মতো যার চালটা টিন দিয়ে ছাওয়া। বারান্দার বাইরের দিকে জানালা গুলোতে লোহার গ্রিল লাগানো তার উপর কালো ফ্যাকাসে কাঁচ। সেজদাদুর বসার ঘরে যেতে হলে বারান্দাটা পেরিয়ে যেতে হবে। বারান্দায় আসবাব পত্র তেমন নেই। শুধু বসার জন্য কয়েকটা চেয়ার আর একটা স্টাডি টেবিল। অবশ্য সেখানে সেজদাদুকে খাবার খেতেও দেখেছি। বারান্দার একেবারে মাঝ বরাবর
47