অরিন্দমের নির্দেশে পুলিশ বোঝাই স্পীডবোট ফিরে যাচ্ছে থানায়। নৌকায় বাঁধা অরিন্দম আর শ্রেয়া তখন নীরব দর্শক। বলতে শুরু করে রানা। "কি ভেবেছিলে অরিন্দম বাবু? আমার বাগদত্তা স্ত্রীকে নিজে বিয়ে করবে? এত সখ? এত ক্ষমতা তোমার? এবার দেখো, কিভাবে তোমার সামনেই বিয়ে করি তোমার প্রেয়সীকে। তারপর তোমাকে কচুকাটা করে ফেলে দেব এই মাতলার জলে। কেউ বাঁচাতে আসবে না। তোমার লাশটাও খুঁজে পাবে না। এসব জায়গায় কত কুমির থাকে, তা জানা আছে তো? ও আর একটা কথা, নিজেকে খুব চালাক মনে করো না? আমার একটার পর একটা লোককে খুন করে, তারপর তদন্তের নামে তাদের বাঘের কামড়ে মৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়েছিলে তো? এবার দেখো, নিজে মরতে কেমন লাগে।"
এত কষ্টের মধ্যেও অরিন্দম বলে ফেলে, "এসব কি বলছ তুমি? আমি কেন খুন করবো?" "কেন মানে? এখন ন্যাকা সাজা হচ্ছে? প্রতিবার খুনের আগে তাদের বাড়িতে লোক গিয়ে তাদের শাসিয়ে আসেনি, যদি তারা আবার বাঘের চামড়ার লোভে বাঘ মারতে যায়, তবে ওই বাঘের হাতেই তাদের মরতে হবে? আর হয়েছেও তো তাই। এসব বলতে চাও তোমার কাজ নয়? পুলিশ ছাড়া এমন কাজ করবে এত বুকের পাটা আছে কোন বাপের ব্যাটার? এখন তৈরি হও মরার জন্য।"
উত্তর দিতে গিয়েও থেমে যায় অরিন্দম। হঠাৎ চোখ যায় নদীর ধারের জঙ্গলে। গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে, কি ওদুটো? হিংস্র শীতল দুটো সবুজ চোখ? আতঙ্কিত হলেও নিজেকে শান্ত রাখে সে। শুধু বুঝতে পারেনা এখন এই অবস্থাতেও কিকরে এতটাই ভুল দেখতে পারে সে। এই সেই দুটি চোখ, যা এখানে আসার পর থেকেই তাকে তাড়া করে আসছে। এতদিন নাহয় মনের ভুল ভেবে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এখনও এই বিপদের মধ্যে দাঁড়িয়েও কি সে ভুল দেখতে পারে? মনে হচ্ছে যেন খুব আস্তে আস্তে চোখ দুটি এগিয়ে আসছে তাদের নৌকা লক্ষ্য করেই।
রানার রিভলভার সোজা তাক করা আছে অরিন্দমের দিকে, চোখে ক্রুর দৃষ্টি। আজ সে দুজনকেই পেয়েছে নিজের হাতের নাগালের মধ্যে। অরিন্দম মরবে, আর শ্রেয়া হবে তার। হঠাৎ শ্রেয়ার চিৎকার শুনতে পায় রানা। মনে মনে একটু পরিতৃপ্তিই লাভ করে সে। কিন্তু তার এই ভালোলাগা মুহূর্তে ছিন্ন হয়ে যায় একটা জান্তব গর্জনে। শুধু সে নয়, অতর্কিত এই আওয়াজে চমকে ওঠে অরিন্দম আর শ্রেয়া ও। মুহূর্তেই সম্বিত ফিরে পায় রানা। তাক করা বন্দুকের নল অরিন্দমের দিক থেকে ঘুরে যায় নদীতে সাঁতরে আসা জন্তুটির দিকে। পরপর ছটা গুলিই সে ছুঁড়ে দেয়, অরিন্দম চেষ্টা করেও আটকাতে পারেনা তাকে।
41