First page Back Continue Last page Overview Image

তারপর বেশ ঝরঝরে অনুভূতিই হয়। কিন্তু হঠাৎ যে মুহূর্তে সেই ঝলকানিগুলো শুরু হয়, সেই মুহূর্তটুকুর জন্যই এই ভয়।

আসলে নিজের মনটাকে খুব বেশী চেনেনা ও। মাঝেমাঝে ওর মনে হয়, ও নিজেকে যতটা সরল ভাবে, তা ও মোটেও নয়। আবার মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো ওর ভাবনাচিন্তা গুলোই সবচেয়ে সরলরেখায় চলে এবং ধারালো, কিন্তু ওর ততোটা মনের জোর নেই বলে এবং সেগুলো সোজাসুজি প্রকাশের ধার এবং ভার ও নিজেই সহ্য করতে পারবেনা বলে, নিজের ভেতরটা অযথাই জটিল করে তুলেছে।

বছর তেরো বয়সে, একদিন সম্পূর্ণ বিনাকারণেই, খুব স্বাভাবিকভাবে ও আবিষ্কার করেছিল, ওর মনের সবচেয়ে তীব্র ইচ্ছেটা হল মা হবার। তেরোবছরের মেয়ের পক্ষে এটা খুবই অস্বাভাবিক কিনা, মনস্তত্ত্ববিদরা হয়তো বলতে পারবেন, অলি সেসবের ধার ধারেনি। ঐ বয়সে তো কারও বাচ্চা থাকেনা, থাকার কথাও নয়, কেউ সামলাতেও পারেনা, কিন্তু তখন থেকেই অন্তত এই ইচ্ছেটাকে দিব্যি সারজল দিয়ে বাড়িয়ে তুলতে কোনো কসুর করেনি ও। অলির এখন মনে হয়, ওর এই অদ্ভুত তীব্র ইচ্ছেটাই ওর জীবনের যাবতীয় স্বাভাবিক এবং

অস্বাভাবিক ঘটনার দিকে ওকে ঠেলে দিয়েছে।

এ বছর বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। এতোটা সাধারণতঃ পড়েনা কলকাতায়। বিকেল থেকে সন্ধ্যেটাও যেন নেমে আসছে আরও বেশী হঠাৎ, ঝুপ করে। একদিন বারকয়েক শোনা ডাকটাকে অনুসরণ করে শীতের বিকেলের ধোঁয়াশার মধ্যে অলি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে কোয়ার্টার ঘরগুলোর সামনে এসে দাঁড়ালো। অলি জানে, গত ছ’বছরে এই জায়গাটায় একদম একা দাঁড়িয়ে চা, কফি খেতে ওকে দেখেছে অনেকেই, প্রথমদিকে কিছু সিনিয়র দিদিরা ওর এই একা, চুপচাপ থাকাটা নিয়ে বেশ কৌতূহলও প্রকাশ করত। তবে আস্তে আস্তে সব কৌতূহলই মানুষের কমে যায়, আর এতো অতি সামান্য ঘটনা।

তবে গত কয়েকদিন ধরে অলি শুধু শুধু আসছেনা এখানে। ও খুঁজতে আসছে সেই বাচ্চাটাকে, যে দিন কয়েক আগে সন্ধ্যেবেলায় মাকে বারবার ডাকছিল। প্রথম দু’একবার অলি খেয়াল করেনি, একটু আনমনে ছিল। বার তিনেক এরকম হবার পর অলির হঠাৎ মনে হল, এই ঘরগুলোয় তো ও কোনোদিন কোনো বাচ্চাকাচ্চাকে দ্যাখেনি! তাহলে এই বাচ্চাটা কোথা থেকে এলো?

24