First page Back Continue Last page Overview Image

ডিকনফাইন্ড : রানাঘাট স্টেশন এর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে একজন বালক, যার চোখে স্বপ্ন, উন্মাদনা ..আর কলকাতার বুকে একজন প্রতিষ্ঠিত সম্মানিত একজন কবি, যার চোখে অভিজ্ঞতার চশমা, আয়নার সামনে কাকে দেখেন?

কবি : রানাঘাটের ওই যে যার কথা আপনি বলছেন, রানাঘাটের পুরোনো যে পরিবেশটা, আমাদের বাড়ি, এ সব কিছুই এখন খুবই বদলে গেছে , আমাদের বাড়ির সামনে একটা খুব বড় উঠোন ছিল, আর আমাদের বাড়ির পাঁচিলটা ছিল ভাঙা, বাড়ির পিছনে ছিল একটা বড় পুকুর, পুকুরটা বর্ষাকালে প্লাবিত হয়ে যেত এবং তার জল উঠে আসত আমাদের উঠোনে, উঠোনের মধ্যে সাপ এঁকেবেঁকে যাচ্ছে, ব্যাঙ লাফাচ্ছে , কেঁচো ঘুরছে, শামুক ঘুরছে , আমরা দেখতে পেতাম। এখন যদি আমাদের বাড়িতে যাওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে ওই উঠোনে আমার ভাই একটা গোডাউন তৈরী করেছে , আর আমাদের বাড়ির পিছনে যে পুকুরটা ছিল সেই পুকুরটা প্লট প্লট করে বিক্রি হয়ে সেখানে বাড়ি উঠেছে, ফলে আমাদের যে বাড়িটা যেটা আমার লেখার মধ্যে পাওয়া যায় , যে বাড়ির বর্ণনা দি, সে বাড়িটা কোথাও নেই আমার মনের মধ্যে ছাড়া।তার বসবাস আমার মনেই। কিন্তু যখন লিখি, এই কথাগুলো লিখিনা, তখন লিখি আমার ছোটবেলায় দেখা বাড়িটার কথা।

এখন মাঝে মধ্যেই মনে হয় যে, যা লিখতে চেয়েছিলাম, ঠিক যেভাবে লেখা উচিত ছিল, সেই মতো লিখতে পারলামনা, লেখা ছাপা হয়ে যাওয়ার পর এ কথা মনে হয়, যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছেড়ে গেলাম, যথাযথ ভাবে লিখতে পারলামনা , এখন জীবনটা সম্পর্কেও সেরকম মনে হয়, যে যেরকম ভাবে জীবনটা গঠন করা উচিত ছিল , সেভাবে গঠন করতে পারিনি। লেখার সঙ্গে জীবনটার একটা মিল আছে, সাদৃশ্য আছে।

ডিকনফাইন্ড : এমন কখনো হয়নি যে কোনো একটা বা দুটো লাইন মাথায় এসেছে, কিন্তু তার তৃতীয় লাইন আর খুঁজে পাচ্ছিনা, তখন সেই দুটো লাইন নিয়ে কি করবো?

কবি : আমার এরকম একটা কবিতা আছে যার তৃতীয় লাইন কখনো মাথায় আসেনি। আমি এগারো মাস অপেক্ষা করেছিলাম , তৃতীয় লাইনটা আসবে বলে, সেই কবিতাটা হচ্ছে

"নাম লিখেছি একটি তৃণে

আমার মায়ের মৃত্যুদিনে",

কবিতাটা আমি শুরু করেছিলাম আমার মায়ের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিন, সেজন্য কবিতাটার নাম ‘বাৎসরিক'... তারপরে এগারো মাস কেটে গেলো কিন্তু তৃতীয় লাইনটা এলোনা, তখন আমি এই কবিতাটাকেই ছাপতে দিয়ে দিলাম।

14