সত্যি-ই চোখে পড়েনি প্রথমে, অথবা চোখে পড়াটা মনে পড়াকে connect করতে পারেনি হয়তো। তারপর একের পর এক, দুটো, পাঁচটা, দলবেঁধে ২০-২৫ টা থেকে এক জঙ্গল।
হুম , কোনো এক গাছের কথাই বলছি, তবে, ঐটুকুই। তার নাম, ধর্ম, পরিচয় কিছুই জানা নেই, জানিনি কখনো। শুধু জানি, ওই পাতার জন্ম দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টার পরেও কাঁটা হয়ে যাওয়া ডাল গুলো, গাঢ় সবুজের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া উৎসহীন সরু সাদা নালী, আর বন্ধ্যাত্বের চিহ্ন ভোলানো হালকা হলুদ ছোট ফুলটা, আমার বহুদিনের চেনা। তবুও চোখে পড়েনি।
চোখের আগেই কখনো কখনো মন পড়ে যায়, এও ঠিক তেমন।
মন পড়েছিল আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগের অন্য কোনো জায়গার অন্য কোনো দিনের অন্য কোনো দুপুরে, সেদিনের চারিদিকে চোখ সইয়ে দেওয়া সারি বাঁধা ওই ফুলের পাতা ছিঁড়ে রান্না করতে গিয়ে মনে হয়নি, হাজারের ভিড়ে এতদিন পর এই এক ফুল আবার ওই দুপুর ফিরিয়ে দেবে।
ট্রেন এর কাঁচটা যতটা বড়, যতটা খোলামেলা বলে মনে হয়, ঠিক ততটা নয়। তখন বুঝলাম , যখন দলে দলে জট বেঁধে যাওয়া গোলাপী, হলুদ, সাদা ফুলের ঝাড়টা চোখে পড়ল। আর মনে পড়ল, এরমই এক ঝোপে কোনো এরকম দুপুরে, সদ্য জন্মানো বাচ্চাটা পড়ে গিয়ে ছটফট করছিল। চার পায়ে জোর আসেনি তখনো , তার মা পাড়ায় বেশ famous ছিল , তাই বাচ্চাটাকে বাঁচানো ছিল পাড়ার লোকেদের unofficial দায়িত্ব।
সেদিন বিকেলে খেলা হয়নি।
চাক্ষুষ করেছিলাম জন্মের দু মিনিট পরের আরেক জন্ম, মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর চোখের জল, পুনর্জন্মের আনন্দ,ধন্যবাদ জানানোর নি:শব্দ প্রচেষ্টা, জমিয়েছিলাম স্মৃতি ,আজ্ দুপুরের জন্য, বুঝিনি অবশ্য সেদিন।
ট্রেন ছুটে চলেছে একের পর এক মনে পড়ানোর চিহ্ন পেছনে ফেলে, মাঠ জুড়ে পলাশ ফুলের বন, রোদে পোড়া সাদা মাঠ, খয়েরি ডাল আর লাল মাথা। পলাশ আর শিউলি টা calendar- এ এত বেশি জায়গা করে নেয় যে এরা গাছ, ফুল, এর পরিচয় ছাড়িয়ে এক একটা ছুটির নাম হয়ে ওঠে
ডায়েরির পাতা থেকে
দুহিতা সেনগুপ্ত
28