রাতের লোকাল আসলে টাইম মেশিন। স্টেশনে তখন মেলে লম্বু আর তেকোনা ক্রিম প্যাটিস। দেখে মনে হয় ক্রিমে ঠাসা, কামড়ালেই ফক্কা। রাতের লোকাল আসলে শেষ রাতের চলন্ত বারান্দা। কেউ কোত্থাও নেই। এমনিতে, বারান্দায় আমি দাঁড়াই, আর রাস্তায় একটা দুটো লোক হেঁটে যায়। রাতের লোকালে আমি দাঁড়াই, লোকগুলোও দাঁড়ায়, বারান্দা ছুটে যায়। রাতের লোকাল আসলে কিচ্ছু না। তার পেটের ভেতর বাজে 'ও আকাশ সোনা সোনা, এ মাটি সবুজ সবুজ, নতুন রঙের ছোঁয়ায় হৃদয় রেঙেছে...' সস্তার মোবাইলের স্পিকার মনে হয় এক্ষুনি গমগমে গলায় বলে উঠবে, এতক্ষণ শুনছিলেন অনুরোধের আসর...। হঠাৎ আলো চলে যায়। 'চা, এই চা' ওঠে। রাতের লোকাল তখন সাতানব্বই সালের একটা চায়ের দোকানের লোডশেডিং-সন্ধ্যে। রাতের লোকালে একটা উমনোঝুমনো মার্কা লোক ছেঁড়া জামা আর লুঙ্গির ওপর আলোয়ান জড়িয়ে বসে থাকে। তার বগলে চেপে ধরা একটা নারকেল ঝাঁটা, নতুন, কারণ ঝাঁটার পেছনের কাঠগুঁজিটা ঝকঝক করছে। চোখ উদাস, কোঁচড় থেকে বিড়ির প্যাকেট বার না করে সে প্যাকেট
ছিঁড়ে কিশমিশ খায় একটা একটা করে, যাতে পুরো রাস্তা সে কিশমিশ খেতে খেতে যেতে পারে। যাতে তাকে বিড়ি না খেতে হয়। খিদেটা ঠিকঠাক পেতে পেতে সে বাড়ি পৌঁছে যাবে জানে। বাড়িতে এই ভাত নামল, এবার ঝুরোঝুরো আলুভাজা আর মুসুর ডাল হচ্ছে, সে সুঘ্রাণ পায় নাকে। যে রাঁধছে, সে বিড়ি খেলে রাগ করে। দু'একবার নিজের বগলের ঝাঁটার দিকে সে আড়চোখে তাকায়। আবার চোখ বুজে কিশমিশ খেতে থাকে।
রাতের লোকাল
শারদ্বত মান্না
6